বন্ধুত্ব হচ্ছে সম্পদ। একজন ভালো বন্ধু আপনার জীবনে চলার পথে নানাভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রেমে বিচ্ছেদের সময় থেকে শুরু করে কোনো দুঃসংবাদ এবং জীবনের চরম দুর্দশার মুহূর্তে আপনার কাছের বন্ধুটি আপনার পাশে থাকে। কেননা বন্ধুত্বের ভালোবাসাটা এমনই। বিজ্ঞান বলে, আপনার একজন ভালো বন্ধুর সমকক্ষ কখনো কেউ হতে পারে না।
বন্ধু দিবস উপলক্ষে বিশেষ এ প্রতিবেদনে কিছু বিজ্ঞানসম্মত ব্যাপার তুলে ধরা হলো, যা একজন ভালো বন্ধুর মাধ্যমে আপনার জীবনে ঘটে থাকে।
মানসিক চাপ থেকে মুক্তি: মন খারাপ থাকলে আপনার বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করে সময় কাটান। ২০১১ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে, একজন ভালো বন্ধু আপনার মানসিক চাপ কমিয়ে দিতে পারে, ফলে আপনি স্বস্তি ফিরে পান। ভালো বন্ধু ব্যতীত আপনি এমন আর কোনো মানুষ খুঁজে পাবেন না, যার কাঁধে মাথা রেখে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতে পারবেন।
একাত্মতার অনুভূতি: সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনার ভালো থাকার জন্য বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন সেটা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। বন্ধুর পরিধি বড় হলে আপনার স্বাস্থ্য ভালো থাকে, আপনি কাজে অনুপ্রেরণা পেতে শুরু করেন এবং সর্বোপরি আপনার মন ভালো থাকে। আপনি যখন অনেক মানুষের সঙ্গে মিশবেন তখন আপনি জানতে পারবেন, সবার জীবনেই কষ্ট এবং কঠিন সময় দুটোই রয়েছে। এই নিতান্ত সাধারণ ধারণাটুকু আপনাকে ভালো থাকতে সহায়তা করবে।
শারীরিক অসুস্থতা মোকাবিলায় বন্ধু : গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিকভাবে একটু সহানুভূতি পেলে অনেক দুরারোগ্য ব্যাধি তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়। তাছাড়া আপনি স্বাস্থ্যহানীর ঝুঁকি এবং মানসিক অবসাদ থেকে মুক্ত হতে পারেন। আপনার বন্ধুর উপস্থিতি আপনাকে ছোটখাট অসুখবিসুখ থেকেও নিরাপদ রাখে। গবেষণায় এমনকি এটাও দেখা গেছে যে, ভালো একটা বন্ধুত্বের সম্পর্কের ফলে ঠান্ডা লাগা থেকেও আপনি মুক্ত থাকেন।
দীর্ঘায়ু পাওয়া: ২০০৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, শক্তিশালী একটি সামাজিক সমর্থন মানুষের আয়ু বৃদ্ধি করতে যথেষ্ট সহায়তা করে থাকে। গবেষকদের মতে, আপনার দৈনন্দিন আচরণের উপর বন্ধুদের বেশ একটি স্বাস্থ্যকর প্রভাব কাজ করে।
নিজের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পাওয়া: আপনাকে আপনার ভালো বন্ধুটির চেয়ে ভালো কেউ চেনে না; এমনকি আপনার দোষগুণ সম্পর্কেও সেই বেশি অবগত থাকে। এজন্য আপনার বন্ধুরা আপনার আসল স্বত্ত্বাটাকে তুলে ধরতে সহায়তা করে। ভালো একটি বন্ধুত্বের সম্পর্কের ফলে ভালোবাসা এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ একটি পরিবেশ তৈরি হয়, যা আপনার এবং আপনার কাছের মানুষগুলোর জন্য চরম একটি ইতিবাচক দিক।
বন্ধুদের কাছে সত্যি বলা: গবেষণায় দেখা গেছে, খুব কাছের বন্ধুদের কাছে গোপন সত্যি বলা আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। তবে কিছুক্ষেত্রে সত্যি বললে অনেক কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সততা বা সত্যি বলাটা সহজ কোনো কাজ নয়, কিন্তু সম্পর্কের গভীরতা ঠিকঠাক রাখার জন্য এটা খুবই জরুরি। কিছু গোপন রাখার চেয়ে তাদের সঙ্গে খোলামেলা সম্পর্ক রাখার ফলে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আরো বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়।
কঠিন কাজ সহজ হওয়া: কোনো কাজ যদি আপনার কঠিন মনে হয় বা আপনি যদি কোনো কাজে আটকে যান তাহলে আপনার কাছের বন্ধুটির সাহায্য নিন। ২০০৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আপনার বন্ধু যদি আপনার পাশে থাকে তাহলে যেকোনো কাজ সহজ হয়ে যায়। যদিও এটি একটি তাত্ত্বিক বিষয়, তারপরও বাস্তব জীবনে এটির যথেষ্ট প্রতিফলন রয়েছে। যেকোনো প্রতিকূলতা সহজভাবে নেয়ার ক্ষেত্রে বন্ধুত্বের প্রভাবটা বেশ জরুরি।
আপনার ভুল ধরিয়ে দেওয়া: ভালো বন্ধুরা আপনার ভুলত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিয়ে আপনাকে সঠিক রাস্তায় হাঁটতে সহায়তা করে এবং যেকোনো বড় বিপদ থেকে রক্ষা করে। সম্পর্ক গবেষক ড. রাউনী এ বিষয়ে বলেন, ‘আপনার ভালোটা বলার পাশাপাশি আপনার দোষগুলোও তারা ধরিয়ে দেয়। অর্থাৎ আপনার বন্ধুরা দুইদিক থেকেই আপনার জন্য ইতিবাচক।’
অফিসে আপনার অবস্থানের উন্নতি: আপনার অফিসের বন্ধুটি আপনার জন্য অনেক কিছু করে থাকে। তার প্রাপ্য সৌজন্যতাটুকু তাকে অবশ্যই দেখান। গবেষণায় দেখা গেছে, অফিসে কাছের কোনো বন্ধু থাকলে আপনার কাজের প্রতি আগ্রহ এবং ভালোবাসা দুটোই বেড়ে যায়। সহকর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরির চেয়ে ভালো সুফল আর হয়না।
আপনাকে একজন সুখী মানুষে পরিণত করে: গবেষণায় দেখা গেছে, বন্ধুদের সঙ্গে হাসি, আড্ডা এবং আনন্দে মেতে ওঠার অনুভূতির ফলে আপনার মন এবং দেহ দুটোই ভালো থাকে। তার মানে এই নয় যে, পুরাতন বন্ধুদের সঙ্গেই শুধু আপনি ভালো থাকবেন। নতুন বন্ধু বানানো এবং তাদের সঙ্গে মেশার ফলে আপনার দেহ অক্সিটোসিন নামক হরমোনের নিঃসরণ ঘটে যার ফলে আপনার মানসিক অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়। তবে আপনার মন খারাপ থাকলে আপনার নিতান্ত কাছের বন্ধুটিই আপনার কাজে আসবে। কেননা তার সঙ্গে আপনি আপনার সুখ-দুঃখ খুব সহজেই ভাগাভাগি করে নিতে পারেন। কাছের বন্ধুরা জীবনের প্রতিটি ধাপে আপনাকে ভালো থাকতে সহায়তা করে থাকে। বন্ধুদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ করতে না পারলে কোনো সমস্যা নেই। তারা যা করেছে সেটার জন্য তাদের ধন্যবাদ দিন। কেননা আপনি তাদের মতো মানুষ সহজে খুঁজে পাবেন না।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।